প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ

রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিএনপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। ৭ ডিসেম্বর ২০২৫।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী কী কী করেছিল, তা মনে রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলে যে একবার দেখুন না এদের (জামায়াত)। তাদের তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। তারা লাখ লাখ মানুষকে শুধু হত্যাই করেনি, তাদের সহকর্মীরা কীভাবে মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল, এই কথাটি আমাদের মনে রাখতে হবে।’
আজ রোববার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।
বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারা দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।
কোনো নাম উল্লেখ না করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের কিছু ব্যক্তি বা বেশ কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন জিনিসের টিকিট বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন জিনিসের কনফারমেশন (নিশ্চয়তা) দিয়ে বেড়াচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘দোজখ, বেহেশত, দুনিয়া—সবকিছুর মালিক আল্লাহ। যেটার মালিক আল্লাহ, যেটার কথা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই বলতে পারেন, সেখানে যদি আমি কিছু বলতে চাই, আমার নরমাল দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বুঝি যে সেটি হচ্ছে শিরক। সেটি শিরকের পর্যায়ে পড়ে।’
উপস্থিত ছাত্রদলের নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে যারা এসব কথা বলে, তারা শিরক করছে। যাঁরা শুনবেন, তাঁরাও শিরকের পর্যায়ে পড়ে যাবেন।
বিজয়ের মাস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারা দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন। আজ রোববার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো
তারেক রহমান বলেন, ‘কিছু কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠীকে ইদানীং বলতে শুনেছি বা বিভিন্ন জায়গায় কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে যে (রাষ্ট্র ক্ষমতায়) অমুককে দেখলাম, তমুককে দেখলাম, এবার অমুককে দেখুন। যাদের কথা বলে—অমুককে দেখুন, তাদের তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। একাত্তরে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে কীভাবে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ঠিক যেভাবে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। এই যাদের কেউ কেউ বলে যে একবার দেখুন না এদের। তাদের দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে।’
এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘লাখ লাখ মানুষকে শুধু হত্যাই করেনি, তাদের সহকর্মীরা কীভাবে মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল, এই কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।’
তারেক রহমানের মতে, দুটি বিষয়কে মোকাবিলা করতে না পারলে দেশ সংকটের মধ্যে পড়বে—সেটা হলো দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কেউ কেউ বলে থাকে পলাতক স্বৈরাচার বিএনপির সম্পর্কে যেভাবে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াত, আমরা ইদানীং লক্ষ করছি কিছু কিছু ব্যক্তি বা দল ঠিক একই সুরে গান গাইছে বা একই সুরে কথা বলার চেষ্টা করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাদেরও তো দুজন ব্যক্তি আমাদের সাথে সেই সময় সরকারে ছিল। এই দুজন ব্যক্তি পৃথিবীতে আর নেই।’
বিজয়ের মাস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রোববার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ।
তারেক রহমান বলেন, ‘দুজনেই সিনিয়র রাজনীতিবিদ ছিলেন। তাঁরা গত হয়েছেন। কাজেই যে মানুষ নেই, তাঁদের সম্পর্কে অবশ্যই খারাপ কথা বলা উচিত নয়। তাঁদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলতে চাই, সেই দুজন ব্যক্তির বিএনপি সরকারে শেষ দিন পর্যন্ত থাকা দুটো জিনিস প্রমাণ করে যৌক্তিকভাবে। এক. তাঁদের অবশ্যই খালেদা জিয়ার প্রতি পূর্ণ কনফিডেন্স ছিল; দুই. খালেদা জিয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন—সে জন্যই তাঁরা শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন।’
উল্লেখ্য, ২০০১-০৬ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী ও তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। সম্প্রতি জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বলেছেন, জামায়াতের ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায় না।
এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘এখন তাদের দলের অন্য যে যত বড় বড় কথাই বলুক না কেন, খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং দুর্নীতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে এই আত্মবিশ্বাস তাদের মধ্যে ছিল। তারা দেখেছিল সেই সরকারকে, কারণ তারা সরকারের ভেতরই ছিল। সে জন্য তারা শেষ দিন পর্যন্ত এই বিএনপি সরকারের সাথে ছিল। আমরা এভাবেই ধরে নিব, অন্য কিছু বলতে চাই না।’
বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে
সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে দেশের জনগণ। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দিতে পারে বিএনপি। এই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতন্ত্র। কোনো মূল্যে জনগণের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে অনেক ষড়যন্ত্রকে রুখে দেওয়া সম্ভব হবে।
ধর্মের নামে বিভাজনের পথ সৃষ্টি
সকালে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি বলেন, একটা গোষ্ঠী, একটা মহল বাংলাদেশে ধর্মের নামে বিভাজনের পথ সৃষ্টি করতে চায়। দেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধর্ম মেনে চলে। কিন্তু বিএনপি ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র বা সমাজের বিভাজনে বিশ্বাস করে না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার সকালে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চলছে। সবচেয়ে বড় যে অপপ্রচার চলছে, তার বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। সাইবার যুদ্ধে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে বিজয়ী হতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. ইসমাঈল জবিউল্লাহ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিএনপি। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।