৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার,সন্ধ্যা ৬:১৮

গণপূর্তের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কায়কোবাদকে কত কোটি টাকার বিনিময়ে পদন্নোতি দেওয়া হলো ?

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

ভালো কে ঐ ফ্যাসিবাদ সরকার  ?  না অন্তবর্তী কালিন সরকার- ???

বিশেষ প্রতিবেদক ঃ

ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন গণপূর্ত অধিদপ্তরের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ই/এম বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদকে কত কোটি টাকার বিনিময়ে পদন্নোতি দেয়া হলো। গত ২১ অক্টোবর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এই কর্মকর্তাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থেকে ই/এম বিভাগের চলতি দায়িত্বে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদন্নোতি দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কায়কোবাদ ই/এম বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। বিগত সবকারের মন্ত্রী এমপিদের আস্থাভাজন কর্মকর্তা হিসেবে তার যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও সচিবের সাথে ছিল তার গভীর সখ্য সম্পর্ক। তাদের সহায়তা নিয়ে তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ টাকার মালিক হয়েছেন। নিজের ও শ্বশুরবাড়ি এলাকায় এবং ঢাকায় রয়েছে তার নামে-বেনামে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট। এই কর্মকর্তার দেশের বাইরেও রয়েছে সেকেন্ড হোম। সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আকতারের ঘণিষ্টজন তিনি। আগে থেকেই তিনি শামীম আকতারের মুরিদ হওয়ার সুবাদে ঘনিষ্টতার কারণ হিসেবেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। শামিম আকতারের মুরিদ হলে অধিপ্তরের যে কেউ আলাদাভাবে সুবিধা ভোগ করতে পারেন। সূত্রটি আরো জানায়, অধিদপ্তরে একটি কথার প্রচলন রয়েছে যে, প্রধান প্রকৌশলী ঘুষ, দুর্নীতি পছন্দ করেন না। কিন্তু আসলে তা নয়, তিনি সপ্তাহে দুদিন তার নারায়নগঞ্জের দরবার শরীফে বসে মুরিদ ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের সাথে নজরানা হিসেবে অর্থ আদায় করেন। যেটাকে উনি দান হিসেবে ধরে নেন বলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। শামীম আকতারের এরকমই একজন ঘনিষ্ঠজন কায়কোবাদ। যিনি সবসময় প্রধান প্রকৌশলীকে খুশি রেখেছেন তার একনিষ্ঠ মুরিদ সেজে। তার এই পদন্নোতির পেছনে শামীম আকতারের অনেক বড় অবদান রয়েছে। পদন্নোতির ক্ষেত্রে ৪ জনের নামের তালিকা দিয়ে অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম থাকলেও প্রধান প্রকৌশলী শামীম আকতার শুধু কায়কোবাদের একার নামে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। কারন ছিল তার মেয়ের বিবাহে এই কায়কোবাদের স্পেশাল  উপঢৌকন ছিল বলে জানা যায়। যার ফলে কায়কোবাদের একার নামই শামীম আকতার স্পেশাল ভাবে পাঠান। একই ব্যাচের অপর কর্মকর্তা ই/এম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহাবুবুল হক চৌধুরী থাকলেও তার নাম পাঠানো হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সুত্র বলছে, এটা শুধু নিয়ম লঙ্ঘণই নয় বলা যেতে পারে একধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। যদিও এ পদন্নোতির বিষয়ে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সম্মতি ছিল আগে থেকেই। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, উপদেষ্টা নিজেও নাকি শামীমের মুরিদ হয়েছেন। যদিও মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম তার পদন্নোতি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনিও উপরি চাপে বাধ্য হয়ে তাকে পদন্নোতি দিয়েছেন। ফ্যাসিবাদের সহযোগী ও কুয়েট ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ৫ আগস্টের পরে তিনি নিজেকে জামায়াত ঘরানার হিসেবে প্রচার করেন।

কায়কোবাদের অতীত ইতিহাস উপদেষ্টাগন জেনেও না জানার বান করে মোটা অঙ্কের উৎকোচের কারনে তাকে পদন্নোতি দিয়েছেন।  ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর প্রশাসক থেকে সর্বত্র নানা পরিবর্তন হলেও গণপূর্ত অধিদপ্তরে বিন্দু মাত্র পরিবর্তন হয়নি যাহার প্রমান  আবারও পাওয়া গেল। ফ্যাসিবাদের দোসর শামীম আকতার ভারতের লোক হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন, ঠিক তেমনি কায়কোবাদকেও পদোন্নতির জন্য জোর তৎপরতা চালিয়ে পদন্নোতিতে সাফল্য রাভ করলেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী মো. কায়কোবাদ পদোন্নতি পেতে গত দুই মাস ধরে নানা চেষ্টা ও তদ্বির করে আসছেন। যার ফলে তিনি ঠিকমত অফিসও করেননি। সূত্র আরো জানিয়েছে, গণপূর্তের প্রকৌশলী কায়কোবাদ ঘুষ, দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের পসরা খুলে বসেছিলেন তার দপ্তরে। ফ্যাসিবাদের শাসনামলের সুবিধাভোগী ও দুর্নীতিলব্দ টাকা বিনিয়োগ করেছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে হঠাৎই আশরাফুল আলমকে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সিন্ডিকেটের কোটি কোটি টাকা রয়ে যায় কায়কোবাদের কাছে। এর মধ্যে একজন জুনিয়র প্রকৌশলীর ও ৮০ লাখ টাকা ছিল বলে বিশ্বস্ত সুত্রে খবর পাওয়া যায়।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীরা সর্বোচ্চ গ্রেড-৩ ভুক্ত কর্মকর্তা। সে হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশে কার্যকর থাকা সরকারি বেতন কাঠামো (জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫) অনুযায়ী, গ্রেড-৩ এর মূল বেতন ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত হয়। বর্তমান বাজারে চলা মুশকিল হলেও আলাদীনের চেরাগের মতো এই কর্মকর্তার রয়েছে বিপুল বিত্ত-বৈভব। যা একজন কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা ব্যাক্তির সম্পদের সঙ্গে কোনভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন তার ঘরের পাশের এই দুর্নীতির বিষয়ে মোটেই আগ্রহী নয়। জানা গেছে, সেখান থেকে ছাড়পত্র আনতেও নাকি অর্ধকোটি টাকা খরচ করেছেন তিনি। প্রশ্ন থেকেই যায়, টাকার বিনিময়েই কী তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হয়ে যাচ্ছেন নাকি পদটি তার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে? বিক্রির এই ভাগবাটোয়ারায় গণপূর্ত উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর নাম বার বার সামনে চলে আসছে। মানবাধিকারকর্মীর আড়ালে তার গণপূর্ত ব্যবসা বেশ রমরমাই বলা চলে। সেও রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।

মো. কায়কোবাদের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জনের গুঞ্জন রয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বিলাস বহুল ফ্ল্যাটের যে দাম তা তার সারাজীবনের বেতনের চেয়ে বেশি। ঢাকার ধামরাইতে তার একটি ১০ তলা ফাউন্ডেশন ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। তার গ্রামের বাড়ী শেরপুরে রয়েছে নামে বেনামে অঢেল সম্পদ। পরিবারের ব্যবহারের জন্য রয়েছে লেটেস্ট মডেলের গাড়ী। তার সার্কেলের সকল কাজের উপর ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে টাকা কমিশন নিয়ে প্রাক্কলন পাসের অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য গণপূর্ত অধিদপ্তরে এই ৪/৫ % কে স্বাভাবিকই মনে করা হয়।

এসব বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কায়কোবাদের বক্তব্য নিতে একাধিকবার তার অফিসে যাওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ না করে কেটে দেন।

চোখ রাখুন আগামি পর্বে—

কোন স্বার্থে ফ্যাসিবাদ সরকারের রক্তের সাথে যার সম্পর্ক তাকে কি করে ৫ আগস্টের পরে  চাকরিচুত্য না করে বরং পদন্নোতি দেয়।তবে কি আমরা ধরে নেবো  ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারি সরকারের আর অন্তবর্তী সরকারের রূপরেখা এক । সামনে আসছে কায়কোবাদের বংশের পরিচিতি ঃ

  • শেয়ার করুন