১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,রাত ৪:৩১

হাসপাতালে সাপে কাটা ৬ রোগী ভর্তি, একজন এলেন বিষধর সাপ নিয়ে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

জেলা প্রতিনিধি ঃ

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় সাপে কাটা জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন প্রমাণস্বরূপ বিষধর সাপও নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন। ঘটনাটি জানাজানি হলে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চারোল ইউনিয়নের মইনুল ইসলাম সাপটি নিয়ে হাসপাতালে চলে আসেন। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উঠানে কাজ করার সময় তার পায়ে কামড় দেয় সাপটি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে অ্যান্টিভেনম দেন। একদিনের চিকিৎসা শেষে বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন।

মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা মইনুল ইসলাম বলেন, দুপুরে উঠানে কাজ করছিলাম। এসময় হঠাৎ একটি সাপ এসে পায়ে কামড় দেয়। বিষের ভয়াবহতা বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত আমাকে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। যেন ডাক্তাররা সহজে বুঝতে পারেন, কোন সাপ কামড়েছে।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. ফুয়াদ বলেন, কেবল মইনুল ইসলাম নন, গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একই হাসপাতালে আরও পাঁচজন সাপে কাটার রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশংকৈল উপজেলার বাসিন্দা। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে জেলাজুড়ে সাপের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে।

চিকিৎসকদের মতে, অনেক ক্ষেত্রেই রোগীরা প্রথমে গ্রাম্য চিকিৎসা বা ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেন। এতে পরিস্থিতি খারাপ হয়। তবে এখন মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছে এবং সরাসরি হাসপাতালে ছুটে আসছে।

স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, অনেক পরিবার এখনো প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে গাছের শেকড়বাকড় বা ওঝার ঝাড়ফুঁক ব্যবহার করেন। এর ফলে সময় নষ্ট হয় এবং অনেক রোগী হাসপাতালে আসতে আসতে মারাত্মক অবস্থায় পড়েন। সচেতনতার অভাবই মূল সমস্যা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এনজিও ও স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন গ্রামে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করা হচ্ছে। এর প্রভাবে অনেকে এখন সঠিক চিকিৎসার জন্য সরাসরি হাসপাতালে আসছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সাপের প্রাদুর্ভাব বর্ষাকালে বাড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলায়ই সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটে, তবে তুলনামূলক বেশি দেখা যায় বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশংকৈলে। চাষাবাদের জমি, কাঁচা ঘরবাড়ি ও ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নেয় সাপ। এতে সাধারণ মানুষ প্রায়ই বিপদে পড়ে।

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ফিরোজ জামান জুয়েল জানান, সাপে কাটা রোগীদের জন্য হাসপাতালে যথেষ্ট অ্যান্টিভেনম মজুত আছে। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে পাঁচজন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হচ্ছেন। বর্ষা ও শরৎকালে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমরা রোগীদের অনুরোধ করছি সাপে কাটলে দ্রুত হাসপাতালে আসতে। কোনো ধরনের ঝাড়ফুঁক বা বিলম্ব করলে বিষ শরীরে ছড়িয়ে জীবনহানির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

 

  • শেয়ার করুন