১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,রাত ৪:২২

হিট অফিসার বুশরার সঙ্গে অবৈধ সিসা বারের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন যারা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ

রাজধানীতে অবৈধ সিসা বার দেদারসে চলছে। ৫ আগস্টের পরও এই বাণিজ্যে ভাটা পড়েনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাতবদল হয়েছে মাত্র। সিসায় আসক্ত হয়ে বহু তরুণ-তরুণীর ভবিষ্যত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

রাজধানীতে সিসা বারের সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায়। সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে বুশরা আফরিন এই ব্যবসায় জড়িত। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন সিসা বারের অবৈধ সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।

সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ আমলে গুলশান ও বনানী এলাকায় খোদ মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য, মেয়র এবং কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় বেশ কয়েকটি সিসা বার গজিয়ে ওঠে। এর মধ্যে গুলশানের কোর্ট ইয়ার্ড বাজার সিসা বার চালাতেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে হিট অফিসার বুশরা আফরিন।

তিনি ডিএনসিসির ‘চিফ হিট অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। বুশরা বাংলাদেশসহ পুরো এশিয়ায় প্রথম চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) ছিলেন।

সিনে অঙ্গনেও বিচরণ রয়েছে ‘চিফ হিট অফিসার’ বুশরার

গত ১৯ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে গুলশান থানা পুলিশ ‘দ্য কোর্ট ইয়ার্ড বাজার’ সিসা লাউঞ্জে এ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এ সময় বিপুল পরিমাণ সিসা, হুক্কা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাদকদ্রব্য ও নগদ অর্থ জব্দ করা হয় এবং ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়।

অভিযান প্রসঙ্গে গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, অভিযানে প্রায় চার কেজি সিসা, একাধিক হুক্কা-বার সেটআপ, বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য এবং নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, লাউঞ্জের মালিককে পাওয়া যায়নি, তবে পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। জায়গাটি মূলত ক্যাটারিং ব্যবসার জন্য ভাড়া নেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে অনুমোদন ছাড়া রেস্টুরেন্ট ও সিসা বার হিসেবে চালু করা হয়।

এ ঘটনায় বুশরার স্বামী জাওয়াদ, লাউঞ্জ পরিচালক আফরোজা বিনতে এনায়েতসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই সিসা লাউঞ্জটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি হাফিজুর রহমান

রাজধানীতে হিট অফিসার বুশরার সিসা বার

 

গুলশানের আরএম সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় ‘মন্টানা লাউঞ্জ’ নামের একটি সিসা বার ছিল। সম্প্রতি অভিযানের পর সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ফের খুলে দিতে এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙিয়ে দেনদরবার চলছে। তবে এমন একটি বা দুটি নয়। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর বেশ কয়েকটি সিসা বার খুলে দিতে রাজনৈতিক নেতাদের চাপে রীতিমতো চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা নারকোটিক্সের ( মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর )।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বনানীতে আল গিসিনো নামের সিসা বারের নেপথ্যে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে রনি চৌধুরী, এবং ফারেন হাইট নামের এক সিসা বার চলত প্রভাবশালী শেখ পরিবারের সদস্য শেখ ফারিয়ার নামে। তবে গত বছর আগস্টে সরকার পতনের পরপরই তাদের সবাই অজ্ঞাত স্থানে গা ঢাকা দেন। ফলে সিসা বার পরিচালনার বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক সিসা বার রাতারাতি চর দখলের মতো দখল হয়েছে। এছাড়া জড়িত অনেকে ভোল পালটে নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ে হাজির হয়েছেন। এর সঙ্গে কতিপয় অসাধু আইনজীবী, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং হলুদ সাংবাদিকদের সিন্ডিকেট যুক্ত। এ কারণে ব্যাপক কড়াকড়ির পরও শেষ পর্যন্ত অবৈধ সিসা বারের ব্যবসা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব হবে কি না-এমন সংশয় দেখা দিয়েছে।

সেলসিয়াস ও এক্সোটিক নামের দুটি সিসা বার আছে বনানী ১১ নম্বর রোডের ৪৩ নম্বর ভবনে। বুধবার সন্ধ্যায় ভবনের লিফটের সামনে দাঁড়ালে নিরাপত্তারক্ষীরা জানতে চান কোথায় যাবেন? সেলসিয়াস লাউঞ্জের কথা বলতেই দায়িত্বরত দুই নিরাপত্তারক্ষী একসঙ্গে বলে ওঠেন নারাকোটিক্সের কড়াকড়ির কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। চালু হলে পরে আসবেন। কখন খুলবে জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, মালিকরা ওপরে কথাবার্তা বলছেন। হয়তো শিগগিরই চালু হবে।

সম্প্রতি বনানীতে সিগনেচার নামের একটি সিসা বারে সাঁড়াশি অভিযান চালায় নারকোটিক্স। সেখান থেকে মাদকসেবনের বিপুল পরিমাণ উপকরণ জব্দের পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি তানভির নামের এক ব্যক্তি নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার তদবির শুরু করেছেন। নিজেকে প্রভাবশালী প্রমাণ করতে তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার প্রচুর ছবি ও সেলফি দেখান। এছাড়া বনানীর হাভানা ক্যাফে লাউঞ্জ নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের মালিক রফিক ফরাজি আগে আওয়ামী লীগের শেলটারে থেকে সিসা বার চালাতেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি ভোল পালটে নিজেকে বিএনপির পদধারী নেতা বলে পরিচয় দিচ্ছেন।

  • শেয়ার করুন