প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫
নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ
জুলাই সনদ স্বাক্ষর নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)। বুধবার (১৫ অক্টোবর) দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক মাসুদ রানা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল
বিবৃতিতে তিনি বলেন, জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়াটি আমাদের কাছে পৌঁছেছে। বিভিন্ন দলের নোট অব ডিসেন্টসহ রচিত জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়াটির প্রথম অংশ সম্পর্কে আমাদের বড় কোনো প্রশ্ন নেই। আমাদের প্রশ্ন সনদের দ্বিতীয় অংশ, অর্থাৎ এর অঙ্গীকারনামা নিয়ে। এই অংশের প্রথম তিনটি পয়েন্ট সম্পর্কে গত ১৩ সেপ্টেম্বর আমাদের লিখিত চিঠিতে দিয়েছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় এ ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন আমরা দেখিনি। তাই এ বিষয়ে আমরা আবার আমাদের বক্তব্যটি পুনরায় তুলে ধরছি।
বিভিন্ন দল সনদের বহু পয়েন্টে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। কিন্তু এই অঙ্গীকারনামার প্রথম পয়েন্টে বলা হয়েছে, ‘…এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব’। স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেয়া বেশিরভাগ দলের পক্ষেই এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা সম্ভব নয়।
একইভাবে দ্বিতীয় পয়েন্টে ‘…পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তফসিল হিসেবে অথবা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করব’- এই কথার উল্লেখ আছে। সনদকে সংবিধানে যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন মতসহ লিখিত একটা দলিল কীভাবে সংবিধানে যুক্ত হতে পারে, সেই ব্যাপারে আমরা স্পষ্ট হতে পারছি না।
তৃতীয় পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমরা জুলাই সনদ ২০২৫- এর বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করব না…’। কোনো দল যদি দেখে, যে বিষয়গুলোতে তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিল, সেগুলোই অনুমোদিত ও কার্যকর হতে যাচ্ছে, তবে তার পক্ষে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া স্বাভাবিক ও যৌক্তিক। জুলাই সনদের মতো একটা গণতান্ত্রিক সনদে এই ধরনের অঙ্গীকার থাকাটা অনভিপ্রেত।
এছাড়াও এই সনদ কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেই ব্যপারে কোনো বক্তব্য চূড়ান্ত সনদে নেই। এই বিষয়টি নিয়েই শেষ পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে ও দলগুলোর মধ্যে প্রবল মতানৈক্য আছে। এই বিষয়টি স্পষ্ট না করে কীভাবে দলগুলো সনদ স্বাক্ষর করবেন সেটা আমরা বুঝতে পারছি না।
আমরা বলেছিলাম, রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে আলোচনার জন্য এখানে মিলিত হয়েছি। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তীকালে রাষ্ট্র সংস্কারের যে দাবিটি উঠেছে, এর মূল নির্যাস ছিল এই যে, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে, নির্বাচনব্যবস্থাকে যেভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা ও সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর যে একচ্ছত্র ক্ষমতা সেটাকে কমিয়ে একটা ভারসাম্যে নিয়ে আসা। সংবিধানের মূলনীতির আলোচনাটি এই উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। আদর্শিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে আলোচনার বাইরে রাখা উচিত। কারণ এ ব্যাপারে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সম্ভব নয়। তাই এই অংশে আলোচনার সময়ে আমরাসহ চারটি দল ওয়াক আউট করেছিলাম। এর বাইরেও দুটি দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম এই বিষয়টি বাদ দিয়ে সনদ রচিত হবে। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় সেটার প্রতিফলন আমরা দেখলাম না। আমাদের জাতি গঠনের ইতিহাসটাও সনদে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
আমরা দীর্ঘদিন আলোচনা করেছি এই বিষয়গুলো নিয়ে। এর একটা সুন্দর পরিণতি আমরা সবাই চাই। আমরা আবারও কমিশনকে অনুরোধ করব সার্বিক দিক বিবেচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। সেটা না হলে এই সনদে স্বাক্ষর করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।