প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 
দুর্নীতি দমন কমিশন
সিলেটের ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের স্থাবর সম্পদের খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে সম্প্রতি সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাছে নথিপত্র চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি হিডেন নিউজকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম।
দুদকের পাঠানো চিঠির মধ্যে একটি হিডেন নিউজের হাতে পৌঁছেছে। ২৫ নভেম্বর ইস্যু করা এ চিঠি পাঠানো হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বরাবর। এতে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির পদ স্থগিত হওয়া সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিন এবং কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী আবদুল ওদুদ আলফু মিয়ার নগরের ভেতরে থাকা স্থাবর সম্পদের খোঁজ চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অসাধু যোগসাজশে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর এলাকায় পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সিলেট সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ওই তিন ব্যক্তির নামে থাকা স্থাবর সম্পদের তথ্য থাকলে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
দুদকের ইস্যু করা চিঠির বিষয়ে জানতে সিলেট সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীর মুঠোফোনে কল করলে তিনি সাড়া দেননি। তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার জানান, দুদকের এ-সংক্রান্ত চিঠি ইস্যুর বিষয়টি তিনি জানেন না।
দুদুকের চিঠি ইস্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী হিডেন নিউজকে বলেন, ‘চিঠি ইস্যুর বিষয়টি আমি জানি না। সাদাপাথর লুটের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। কেন আমাকে এ বিষয়ে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে, সেটাও জানি না। এটা মিথ্যা অভিযোগ।’
এদিকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাদাপাথর লুটপাটের পর থেকেই লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করতে দুদক নানা ধরনের অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের স্থাবর সম্পদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তবে কেবল তিনজন ব্যক্তিই নন, আরও অনেক অভিযুক্ত সম্পর্কে এমন নানা তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্থাবর সম্পদসহ সবকিছু পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লুটে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ছাড়া ৩ সেপ্টেম্বর দুদক জানিয়েছে, ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর লুটপাটে রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। উপপরিচালক মো. রাশেদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি দল এ বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব পেয়েছে। এর আগে গত ১৩ আগস্ট দুদক সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সাদাপাথর এলাকায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়। পরে অভিযানে পাওয়া যাবতীয় তথ্য প্রতিবেদন আকারে ঢাকায় পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাদাপাথর লুটপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা ছিল। তালিকায় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আছেন। এ ছাড়া লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা ও সহযোগিতা ছিল।
ওই প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা গেছে, ছয়টি ক্যাটাগরিতে পাথর লুটে জড়িত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় এবং সরকারি সংস্থাগুলোর কার কী ভূমিকা ছিল, তা বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নিষ্ক্রিয়তা, লুটেরাদের কাছ থেকে কমিশন নেওয়াসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। যে ছয়টি ক্যাটাগরিতে দুদক পাথর লুটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার বিবরণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, এ ক্রমে প্রথমেই ছিল খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। এরপর স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, রাজনীতিবিদ ও অন্যরা রয়েছেন।
এদিকে সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির পদ স্থগিত হওয়া সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯। সম্প্রতি তিনি জামিনে ছাড়া পান। এ ছাড়া পাথর লুটের ঘটনায় গত ৪ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু মিয়া।