প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে; ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ।
ফ্যাসিবাদী শাসন ও বৈষম্য থেকে এখনো মুক্তি মিলেনি; বরং দেশ এখন গভীর সংকটে রয়েছে। ‘বিদেশি প্রভাবিত’ অন্তর্বর্তী সরকার নতুন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন জাতির প্রধান দাবি। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়েজনের নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সময়ক্ষেপণ করা উচিত হবে না।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জাসদ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
দেশ এখন জটিল পরিস্থিতির মধ্যে আছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ থেকে মানুষ মুক্তি চেয়েছিল। একটা অরাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়েছে। আমরা তাদের নৈতিকভাবে সাপোর্ট করেছি। কিন্তু তারপরে যে চেহারা-সুরত আবির্ভূত হয়েছে, এক কথায় বলতে গেলে বিদেশি মনোনীত একটা সরকার। এই সরকারের কাছ থেকে আমরা খুব কিছু আশা করি না এখন।’
শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘আমরা বটম লাইনে (শেষ প্রান্তে) চলে গেছি। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যাতে একটা ইলেকশন দিয়ে চলে যান। তিনি শুরুতে বলেছিলেন, সবকিছু ঠিকঠাক করতে পাঁচ বছর লাগবে। জনগণের দাবির প্রেক্ষাপটে ২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দেবেন বলেছেন। তিনি এনসিপি, জামায়াত আর বিএনপির সঙ্গে আলাপ করেন, সলাপরামর্শ করেন। মাঝেমধ্যে এটাকে হালাল করতে আমাদের সবাইকে ডাকেন।’
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি বলেন, ‘আমরা গভর্নমেন্টকে সাপোর্ট করতে জাতীয় ঐকমত্যের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছি। প্রত্যেকটা বৈঠক থেকে প্রত্যেকটা ইস্যুতে গভর্নমেন্টকে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যের আলোচনা করে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে দেশের মানুষ যদি মনে করে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, আমি মনে করি সেটা ভুল করবে না।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না মন্তব্য করে শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘যদি এটা করতে চান, জনতার মুখোমুখি হতে হবে। কাজেই সব বাদ দিয়ে ইলেকশনটা দিয়ে দেন। গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ন্যূনতম ঐকমত্য গঠিত হয়েছে, সেটার ওপর ভিত্তি করে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলো পরবর্তী পরিক্রমায় সেগুলো পালন করবে।’
‘হাসিনা–খালেদা–ইউনূসকে বর্গা দিয়ে ঠকেছি’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশ ভয়ংকর একটা পরিস্থিতি। বলতে হয়, সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দিব কোথা? দেশের এক জায়গায় মলম লাগাবেন আরেক জায়গায় ফোড়া বের হবে। টোটকা-ফোটকায় কাজ হবে না। একটা সামাজিক বিপ্লব আজকে ফরজ হয়ে গেছে।
কেউ জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে না মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘বারবার আমরা ঠকি। কেন ঠকি? জমি বর্গা দেওয়া যায়, স্বার্থ বর্গা দেওয়া যায় না। হাসিনাকে (শেখ হাসিনা) বর্গা দিয়ে ঠকে গেছি। খালেদাকে (খালেদা জিয়া) বর্গা দিয়ে ঠকে গেছি। ইউনূসকে (মুহাম্মদ ইউনূস) বর্গা দিয়ে ঠকে যাচ্ছি। এরাই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় দেশ চালিয়েছে, লুটপাটতন্ত্র কায়েম হয়েছে। লুটপাটের রাজত্ব বহাল রাখার জন্য মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। এমনকি ভোটাধিকার পর্যন্ত হরণ করেছে।’
এ সময় জামায়াতে ইসলাম সম্পর্কে সিপিবির সাবেক সভাপতি বলেন, ‘আমাদের কাজে কোনো অবহেলা, ঐক্যে কোনো দুর্বলতা যদি দেখা দেয়, আমরা প্রকারান্তরে জামায়াতে ইসলামকে সুযোগ করে দেব এই খালি মাঠ পূরণ করার জন্য। সুতরাং এই হলো আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ।’ তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ধর্মভিত্তিক সংগঠন সম্পর্কে অন্য সমালোচনা আছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামের সম্পর্কে বলতেছি, তাদের তো বাংলাদেশের মাটিতে অফিস করার, তৎপরতা চালানোর কোনো অধিকার নাই। কিন্তু সে জোর এখানে থাকতেছে কেন? একটা গভীর ষড়যন্ত্রের জাল।’
জামায়াতের সংস্কার এবং নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি প্রসঙ্গে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তাহলে সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু ন্যায়বিচারও সম্ভব নয়। সংস্কার ছাড়াই ট্রাইব্যুনাল করলেন কেন? যদি সংস্কার ছাড়া নির্বাচন শুদ্ধ না হয়, তাহলে সংস্কার না করে বিচারব্যবস্থার ভেতরেও তো রোগ রয়ে গেছে। তাহলে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে এক দুর্যোগের ঘনঘটা। একটা গভীর সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ নিপতিত হচ্ছে। একটা গভীর খাদের কিনারে এসে বাংলাদেশ এখানে উপনীত হয়েছে।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, স্থায়ী কমিটির সদস্য রোকনুজ্জামান রোকন, আনোয়ারুল ইসলাম, বাদল খান, করিম শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুশতাক হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ–উপাচার্য সোহেল আহমেদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ বক্তব্য দেন।