প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫
কুমিল্লা প্রতিনিধি ঃ
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ইনজেকশন নির্ধারিত মূল্যের প্রায় ১৩ গুণ বেশি দামে কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে বুধবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ বলেছেন, “এটি প্রিন্টিং মিসটেক।”
এদিকে এ ঘটনায় পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজের অপসারণ দাবিতে হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ‘নিপীড়িত নাগরিক সমাজ’।
এ ছাড়া ‘কুমিল্লার ছাত্র-জনতা ও সচেতন এলাকাবাসী’র ব্যানারেও পরিচালক, তার প্রধান সহকারী দেলোয়ার হোসেন এবং বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব কুমিল্লা মহানগর সভাপতি এম এম হাসানের অপসারণ দাবি করা হয়েছে।
‘৪ লাখ টাকার ওষুধ ৫২ লাখ টাকায়’
সম্প্রতি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওষুধ কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগ করেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ওষুধপত্র (এমএসআর) গ্রুপে পাঁচ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়।
চাহিদাপত্রের ৩ নম্বর ক্রমিক অনুযায়ী, ইনজেকশন পেনটোথাল সোডিয়াম এক গ্রাম (পানিসহ) চার হাজার ভায়েল কেনা হয়েছে। প্রতি ভায়েলের খুচরা বাজার মূল্য (এমআরপি) ১০১ টাকা। কিন্তু প্রতি ভায়েল ক্রয় করা হয়েছে ১২৯৯ টাকা দরে।
চিকিৎসকরা দাবি করেন, চার হাজার ভায়েল কেনা হয়েছে ৫১ লাখ ৯৬ হাজার টাকায়। অথচ এর প্রকৃত দাম মাত্র চার লাখ চার হাজার টাকা। শুধু এক প্রকার ওষুধে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এই ওষুধ অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগে ব্যবহার করা হয়।
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, ওষুধপত্র গ্রুপের প্রতিটি ওষুধ খুচরা বাজার মূল্যে ক্রয় করার সরকারি বিধান রয়েছে।
যদিও হাসপাতালের পরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ বলেছেন, “এটি আসলে প্রিন্টিং মিসটেক ছিল।”
এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আবুল খায়ের বলেন, “আমাকে কোনো কিছু না দেখিয়ে পরিচালক স্বাক্ষর করেছেন। ভুল করে না দেখে স্বাক্ষর করা, এমন হতে পারে না। কেনাকাটার বিষয়ে সব কিছু পরিচালক ও তার সহকারী দেলোয়ার হোসেন জানেন। আমাকে কিছু জানানোও হয় না।”
তবে দেলোয়ার হোসেন তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক নিশাত সুলতানা বলেন, “এমন ‘প্রিন্টিং মিসটেক’ স্বাভাবিক নয়। তবে যে ভুলটি হয়েছে তা ধরা পড়ায় আমরা বাড়তি টাকা দিয়ে অন্য ওষুধ কিনেছি।”
অধিকার ফাউন্ডেশন কুমিল্লার প্রধান নির্বাহী আলী আকবর মাসুম বলেন, “‘প্রিন্টিং মিসটেক’ বলে এমন দায়িত্বশীল জায়গা থেকে দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি এভাবে দায় এড়াতে চান, তার মানে তিনি তার দুর্নীতি আড়াল করতে চাচ্ছেন।
“আদৌ যদি এরকম কোনো ভুল হয়ে থাকে, তাহলে তো তিনি তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই আবার সেটি সংশোধন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন কিংবা হিসাব বিভাগে সেটি জানাবেন। অথচ তার হিসাবরক্ষক নিজেই সেটি জানেন না। সুতরাং এই দায় তাকেই নিতে হবে।”
ওষুধ কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে কয়েকজনের অপসারণ দাবি করে মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন বিক্ষুব্ধরা।
এ সময় তারা আরও অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন হাসপাতালে অনিয়ম ও দালালের দৌরাত্মের বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ করেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বরং তাদের বিরুদ্ধে পর পর দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে।
এতে বক্তব্য দেন এনসিপির মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান, এবি পার্টির মহানগরের আহ্বায়ক গোলাম মো. সামদানী।
ড্যাব জেলা, মহানগর ও কলেজ শাখার কার্যক্রম স্থগিত
ওষুধ কেনাকাটাসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর কুমিল্লায় ড্যাবের তিনটি শাখার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অসাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে ড্যাব মহাসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম শাকিল স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।