৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার,দুপুর ২:৪২

খাদ্য অধিদপ্তরে পদোন্নতি-পদায়নে ব্যাপক অনিয়ম, কোটি কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

 

 

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

খাদ্য অধিদপ্তরের পদোন্নতি-পদায়নে যেসব অনিয়ম-অপকর্মের নজির ধরা পরছে তাহা অতীতে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী ও লুটের সরকারের আমলেও হয় নাই। সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজের প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট বেশকিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে সরকারের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবগন আখের গুছিয়ে নেয়ার প্রবণতা ততই বাড়ছে বলে জানা গেছে। আখের গুছিয়ে নেয়ার ধান্দায় উপদেষ্টা এবং সচিব উভয়েই অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বদলি, পদোন্নতি, পদায়নে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সর্বশেষ, গত সপ্তায় আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা পদে পদায়নে অন্ততঃ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বহুল আলোচিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজ চট্টগ্রামের আরসি ফুডকে খুলনায় বদলি করে আবার সেই বদলির আদেশ বাতিল করা হয়েছে দুই কোটি টাকার বিনিময়ে। এই ঘুষ লেনদেনের কথাটি ইতিমধ্যে খাদ্য বিভাগে ব্যাপকভাবে চাউর হয়েছে। এদিকে আরেক শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম খানকে স্ত্রী কর্তৃক দায়েরকৃত দুর্নীতির অভিযোগ, নারী নির্যাতনের অভিযোগ এবং ফৌজদারি মামলার মতো গুরুতর ঘটনাকেও পাশ কাটিয়ে পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও দুই কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, জহিরুল ইসলাম খানকে চলতি দায়িত্বে পরিচালক করার বিষয়ে ডিপিসির অবৈধ সিদ্ধান্তটি শুরুতে আটকে দিয়েছিলেন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তাৎক্ষণিক তিনি এও মন্তব্য করেন যে, এত গুরুতর ঘটনাকে আমলে না নিয়ে কীভাবে জহিরকে পরিচালক (চ. দা.) পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নিলো ডিপিসি। কিন্তু ওই দিনই এর একটু পরে দেখা গেলো, জহিরের পদোন্নতির প্রস্তাব অনুমোদন করে দিয়েছেন উপদেষ্টা নিজেই। এভাবে এক দিনের মধ্যে কিছুক্ষণের ব্যবধানে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মতো ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই অবাক হয়েছেন। এতে দুই কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

স্ত্রীর আপন বড় বোনের মেয়ের সঙ্গে জহিরের পরকীয়া কেলেঙ্কারি, স্ত্রীর ওপর নির্যাতন, স্ত্রীর মামলা দায়ের।চট্টগ্রামের আরসি ফুড পদে পদায়নে থাকাকালে স্ত্রী শারমিন আক্তারের আপন বড় বোনের মেয়ে শাহানা আক্তার স্বর্ণার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান জহিরুল ইসলাম। প্রায় তিন বছর ধরে চলে এই পরকীয়া সম্পর্ক। পরবর্তীতে এক পর্যায়ে হাতেনাতে ধরাও পড়ে যান জহির। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর জের হিসেবে শারমিন আক্তারকে শারীরিক নির্যাতন করেন জহিরুল ইসলাম খান। এসব ঘটনা তুলে ধরে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ঢাকার ১৩ নম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন জহিরুল ইসলাম খানের স্ত্রী শারমিন আক্তার। মামলায় মোট চার জনকে আসামী করা হয়। এরমধ্যে এক নম্বর আসামি হলেন জহিরুল ইসলাম খান, ২ নং শাহানা আক্তার স্বর্ণা (বোনের মেয়ে), ৩ নং আসামি সাইদ হাসান শাকিল (আপন বোনের ছেলে) এবং ৪ নং আসামি (আপন বোন) সাইফুন আরা।

মামলার আরজিতে শারমিন আক্তার তাঁর ওপর চরম শারীরিক নির্যাতনের একাধিক দিনের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণও সংযুক্ত করেন মামলার আরজির সঙ্গে। ৫ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে জহিরুল ইসলামের মারপিট ও নির্যাতনে শারমিন আক্তার অজ্ঞান পড়লে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপরে সর্বশেষ ২৭ডিসেম্বর.২০২৪ তারিখে জহিরের কিল-ঘুষি ও নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। শারমিন আক্তার আরজিতে অভিযোগ করেন, জহিরুল ইসলামের অর্থের লোভে লাভবান হওয়ার আশায় তাঁর আপন বোনের মেয়ে শাহানা আক্তার স্বর্ণা এই অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছে।

 

  • শেয়ার করুন