প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫
উল্লেখিত ০৩ দুর্নীতিবাজদের কুতুবকে আওয়ামীলীগ ও আমলারা সহায়তা করতো এখন করে কারা ?
বিশেষ প্রতিনিধি ঃ
মো. সুলতান মাহমুদ খাঁ ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরই তার বিবেককে পল্টি দেয়। তিনি ভাবেন এবার দেশ বিদেশে বাড়ী গাড়ী করবেন, আকাশে উড়বেন কাজীই বংশের পরিচয়টা রাখা যাবে না। যেই “ভাবনা সেই কাজ”।পাবনার আলাউদ্দিন খাঁ ও পারুল খাঁ দম্পতির সন্তান সুলতান মাহমুদ খাঁ। সনদে বাদ দিয়ে দেয় বংশ পদবির ‘খাঁ’ শব্দটি। কর্মস্থল থেকে বিদেশের মাটিতে তিনি এবার পরিচিতি হয়ে ওঠেন সুলতান মাহমুদ হিসেবে। কারন স্বৈরাচারী সরকারে তিনি ছিলেন খাস চামচা ও বিশ্বস্ত কর্মী।যা ইচ্ছা তা করে বেড়াতেন দপ্তরে।৫ আগস্টের আগেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত প্রতাপশালী জামালপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী সরকারে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ তালিকায়। বিষয়টি বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী জানার পর ও মন্ত্রনালয়ে ফ্যাসিবাদ সরকারেরে জনবলের জন্য সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলেই জানা যায়।
রাজধানী ঢাকার বুকে বনানী, বারিধারা, তেজগাঁও, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে সুলতানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। একাধিক বাসা-বাড়ি-গাড়িসহ ৫০০ কোটির উপরে তার সম্পদ হবে। ৫০০ কোটি টাকার মালিক হওয়ায় নিজের জন্মস্থানকে ও নিন্মবিত্ত পরিবারের এবং পাবনার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা পরিচয় দিতে অস্বস্তিবোধ করেন । কারন ৫০০ কোটি টাকা মালিক হওয়ায় সেই কাঁদা মাটিতে তার পা রাখতে তার শরীরে ঘৃনাবোধ করছে। অথচ আজকের কোটি পতি সুলতান মাহমুদ খাঁ সেই অজোপাড়ায় তারজন্ম হয় ও সেখানেই বড় হয়ে ওঠে।
ফ্যাসিবাদ সরকারে শীর্ষ দুর্নীতিবাজকে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামালপুরের সন্ত্রাসী মির্জা আজম এ সুলতান মাহমুদকে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহীর দায়িত্বে বসান। শর্ত ছিলো ‘দিয়ে খাবার’। শেখ হাসিনার বাবা বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা ছিলেন সুলতান। মির্জা আজমের পাওয়ার আর দলীয় প্রভাব-দু’য়ে মিলে ঐশ্বরিক ক্ষমতা অর্জন করেন সুলতান মাহমুদ খাঁ। অধিদফতরের উপরের ‘খাস কামরা’তে বসে ধরাকে সরাজ্ঞান করেছেন এ প্রকৌশলী। শুধু জেলাই নয় কন্ট্রোল করতেন কেন্দ্রীয় অফিসও।
জামালপুরের অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিডেন নিউজকে জানান, পছন্দের ঠিকাদারকে দেয়া কাজে নিতেন ১০ থেকে ২০ পারসেন্ট কমিশন। বদৌলতে দিতেন ১০-১৫ পার্সেন্ট উর্ধদর (এভাব)। সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ নীতিকে লোপাট করেছেন শতকোটি টাকা।
সুলতান মাহমুদ ঠিকাদারদের কাজ দিতেন আর স্ত্রী ফাল্গুনী নুপুর গুনে নিতেন কমিশনের টাকা। দেখাশুনা করেন ঠিকাদার চরিত্রে প্রক্সি দেয়া ভাড়াটেদের। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বচরিত্রের সহকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় হাজার কোটি টাকার মালিক মধ্যবিত্ত পরিবারের সুলতান মাহমুদ ওরফে সুলতান খাঁ।
বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর শাখা, ঢাকা-এর ১১ সদস্যের কমিটিতে সুলতান মাহমুদ ১০।
দফতর সূত্র জানিয়েছে, সুলতান মাহমুদের বেনামি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির ফাইলগুলো দেখভাল করেন সাদাবাবু। কোথায় কোন দুর্নীতি হয়েছে তা বাবুর নখদর্পনে। নতুন নির্বাহী সামিউল যেকোনো ফাইল তলব করতে পারেন এজন্য ইতোমধ্যে বেশ কিছু ঝামেলার ফাইল গায়েব করেছেন। সুলতান জামালপুর ছাড়তে পারলেও তার দুই খলিফা ঘুষ কালেক্টর সাদা বাবু ও ক্যাশিয়ার আমিনুল রয়ে গেছেন ! এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ঠিকাদাররা।কিন্তু তার সহযোগীরা এখনও বহাল তবিয়তে।তাদের তো কিছুই হয় নাই।
সাবেক ছাত্রলীগ ও বর্তমান বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ নেতা সুলতান মাহমুদের আমলনামা এখন সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড তদন্তকারী দলের হাতে। শুরুতেই ফলাও করে আসতে থাকে এ প্রকৌশলীসহ অন্যদের নাম। তবে অবৈধ ‘টাকার চাঁদর’ দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছেন ওই ফাইল। ঘনিষ্ঠজনদের কাছে সুলতান শেয়ার করেন উপদেষ্টা ও সমন্বয়ককে ম্যানেজ করার কথা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুলতান মাহমুদকে ওএসডি করলেও বিশ্বব্যাংকের ১৮৮২ কোটি টাকার প্রকল্প থেকে হরিলুটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এই চক্রের আরেক সদস্য কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসরুল্লা। তিনি সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। মো. নাসরুল্লার বিষয়টিও তদন্তাধীন বলে মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, এলজিআরডি উপদেষ্টার বাড়ি কুমিল্লায় হওয়ায় তাকেও ম্যানেজ করেছেন এই দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী। তবে এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন ক্রাইম জোন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্পে শতকোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০২১ সালের অক্টোবরে দেশের ৩০টি জেলায় পাইপলাইন স্থাপন, গভীর নলকূপ স্থাপন, ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কাজে ১ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার এই প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপদ পানির সেবায় বিশ্বব্যাংকের সহায়কপুষ্ট এই প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক তবিবুর রহমান, জামালপুর এবং কুমিল্লা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বেশকিছু তথ্য-প্রমাণ নিয়ে তদন্ত কাজ করছে বলে জানা যায়।
প্রকৌশলী তবিবুর রহমান তালুকদার বুয়েট ছাত্রলীগের নজরুল গংয়ের সদস্য ছিলেন। দুর্নীতির ‘মহানায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া’ এই প্রকৌশলী পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালার (পিপিআর) ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে সর্বনিম্ন দারদাতাকে বাদ দিয়ে চতুর্থ, পঞ্চম অবস্থানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছেন। এসব অনিয়মের কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি আশঙ্কাজনক কম ও গুণগত মান অত্যন্ত নিম্ন। বিভিন্ন প্রকল্পের পরামর্শকদের বেতন থেকে পারসেন্টেজ গ্রহণ করা এবং টাকার বিনিময়ে এনজিও নিয়োগের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় প্রকল্প পরিচালক তবিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নেতা ছিলেন। সেই সুবাধে আওয়ামীপন্থি ঠিকাদারদের সঙ্গে সখ্য থাকায় তাদের বিশেষ সুবিধা দিতেন। ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতেন। কাজ না করে ঠিকাদারদের কোটি কোটি টাকার বিল প্রদান করার অভিযোগও পাওয়া যায়।