৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার,সন্ধ্যা ৬:০৭

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই-এম সার্কেল এর প্রকৌশলী কায়কোবাদ হুজুর ঘুষ পেলেই অফিস ছাড়েন!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

 

 

হিডেন নিউজঃ

 

মো: কায়কোবাদ  একজন  নামী দামী  হুজুর ও ঈমানদার লোক বলেই সাধারন মানুষ মনে করেন। কিন্তু ঠিকাদারগন ও অফিসের ষ্টাফগন এবং সাংবাদিকগনই জানেন যে , সে একজন মস্তবড় ঘুষখোর। সে ঘুষ ছাড়া কোন স্বাক্ষর করেন না। ঘুষ নেন স্বাক্ষর করেন । খাম দেখে ও চেপে মোটা না পাতলা দেখেই ঘুষের পরিমান বুঝে নিতে পারেন। সে কখনো ঘুষের টাকা গুনে নেন না!! আর একটা অভ্যাস হলো ঘুষের টাকা হাতে নেওয়ার পর তিনি অফিস কক্ষ ত্যাগ করেন। অফিসে আর থাকেন না। বেড় হতে যতক্ষন দেরি। এর মধ্যে যে-ই আসুক না কেন দেখার কোন অনুমোতি সে দেন না।গনপুর্ত অফিসগুলি হলো জন সেবার একটা নিদৃষ্ট অফিস এখানে লোকজন আসবে কথা বলবে কাজ করবে খোলামেলা থাকবে।  কিন্তু তা –না প্রত্যক নির্বাহী, তত্ত্বাবধায়ক, অতিরিক্তসহ প্রায় প্রকৌশলীর কক্ষের দরজায় পাহাড়াদার থাকে ও দরজা বন্ধ থাকে, ঠিক যেন চিড়িয়াখানার পশুদের কক্ষের মত ।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের অনিয়ম ও দুর্নীতি অনেকটা প্রকাশ্যে। তারা কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কাই করছে না। গনপূর্তের  ই-এম  ও সিভিল বিভাগের প্রতিটি শাখা ও উপ-শাখায় চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। অধিদপ্তর জুড়ে প্রতিটি সার্কেল প্রকাশ্যে চলে বেশুমার দুর্নীতি খেলা। এই দুর্নীবাজদের কাছ থেকে অনেকেই লাভবান (বেনিফিশিয়ারিজ)। তাই দুর্নীতর দুষ্টচক্র কারোর পরোয়া করে না। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায় ভিন্ন তথ্য। গণপূর্তে দুর্নীতির ডালাপালা একধরনের প্রতিষ্ঠানিকভাবে রুপ নিলেও সবাই এখানে কথিত ‘সৎ’ এবং ‘নিষ্ঠাবান’ কর্মকর্তা।

এমন তারা ভাব করেন ভুলেও কেউ এক পয়সা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে না। অথচ খোঁজ নিলে দেখা যায়, প্রত্যেকেরই রয়েছে বিপুল বিত্ত বৈভব। কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ, বাড়ী, গাড়ী ও বিপুলপরিমান ব্যাংক ব্যালেন্স। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা থাকলেও, সেখানে গনপূর্তে প্রকাশ্যে কমিশন বাণিজ্য হয়।

তাদের বিষয়ে গণমাধ্যমে কিছু খবর প্রকাশিত হলেও উল্টো ওই গণমাধ্যমকেই চোখ রাঙ্গানো হয়, অথচ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। গনপূর্তে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের দুষ্টচক্র মিলে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সেখানে কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হলেও কেউ কারও বিরুদ্ধে মুখ খোলেনা। সাংবাদিকদের একটি অনুসন্ধনী টিম এর বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দুর্নীতি’র ভয়াবহ সব তথ্য।  অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ধারাবাহিকতায়  আজ প্রকাশিত হলো গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই-এম সার্কেল-২ এর বিভিন্ন বিভাগের অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র।

 

 

 

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই-এম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদের নেতৃত্বে এই চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সূত্র নিশ্চিত করেছে নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস, সাজেদুল, আব্দুল হালিম, আনোয়ার হোসেন, সমীরণ মিস্ত্রি, জাহাঙ্গীর আলম, প্রত্যেকের নিকট থেকে প্রধান প্রকৌশলীর নাম ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই সিন্ডিকেট।

গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর বিশ্বস্থ সহচর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তারের অত্যন্ত  আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করছেন  কায়কোবাদ।অনিয়ম ও দুর্নীতির সমস্ত অলিগলি কায়কোবাদের চেনা বা জানা। গনপূর্ত অধিদপ্তরের ই-এম সার্কেল -২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: কায়কোবাদের অধীনে রয়েছে ইএম বিভাগ ৪, ৫,৭ প্রতিটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর দুর্নীতি ও অনিয়মের আলাদা খতিয়ান। অথচ এ সমস্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির দায় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এড়াতে পারে না।

অনুসন্ধানে দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড যেমন তুলে ধরা হয় তেমনি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের খতিয়ান ও তুলে ধরার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গণপূর্তের দুষ্টচক্রের অন্যতম হোতা মো. কায়কোবাদের অতীত কর্মকান্ড ঘেঁটে দেখা যায়, বড় বড় মাফিয়া ঠিকাদারদের সঙ্গে তার সখ্য। তাদের হয়ে কাজ করেন তিনি। তাদের কাছ থেকে পান মোটা অংকের কমিশন। এ কারনেই তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। তার সার্কেলের একাধিক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজ না করেই বিল তুলে নিয়েছেন। এমন তথ্য প্রমাণ বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সেগুলো তদন্তে আলোর মুখ দেখেনি। নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার পরেও তা মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর এমনকি দুদক তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দুর্নীতিবাজ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একপ্রকার অধরা থেকে দুর্দান্ত প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর  সহ লোভনীয় সব বিভাগে চেষ্টা করছেন বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর একান্ত আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে নিজের একটা যায়গা করে নিতে।

তার বিষয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরাসরি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। যার দায় দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে মো.কায়কোবাদও এড়াতে পারেন না। ই-এম বিভাগ-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরেও কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটা প্রশ্ন নির্বাহী প্রকৌশলী যদি কাজ না করে বিল তুলে নিয়ে যায় তাহলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কাজটা কি? শুধু বসে কমিশন খাওয়া? না অন্য কিছূ?

একজন তত্তাবধায়ক প্রকৌশলীর তার বেতন কত? তা বিশ্লেষণ করলেই প্রমাণ হয় তিনি কতটুকু ও নিষ্ঠাবান।মো: কায়কোবাদের বাবার নাম ইউনুস আলী সরকার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের আওয়ামীলগের সভাপতি ছিলেন। কায়কোবাদের জাতীয় পরিচয় পত্র নং ১৯৬৭২৬৯৯০৪০৭২১৬০১ তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী, গনপূর্ত ই-এম সার্কেল-২। তার অধীনে ৩ জন নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন। ই-এম বিভাগ-৪, মো: মহিবুল ইসলাম, ই-এম বিভাগ-৬ পবিত্র কুমার দাস। প্রত্যেক নির্বাহী প্রকৌশলীর আলাদা আলাদা দপ্তর। তাদের  প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে আলাদা আলাদা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।

কায়কোবাদ বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ার কারনে গনপূর্ত ই-এম সার্কেল চট্রগ্রাম থেকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ন ই-এম সার্কেল-২ এর পদায়ন করা হয়েছে। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের সময় তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ই-এম) গনপূর্ত ই-এম প্লানিং সার্কেলে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ছিলো।

তিনি তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলীর নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ যদি দুদক অনুসন্ধান করতে পারে, ক্ষমতার জোরে আশরাফুল আলমের ক্যাশিয়ার খ্যাত মো: কায়কোবাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়নি। অভিযোগ রয়েছে তিনি বৈধ ও অবৈধভাবে বিপুল পরিমান জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন। দেশে বিদেশে তার তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমান সম্পদ। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বিলাস বহুল ফ্ল্যাটের মালিক তিনি।

যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। ঢাকার ধামরাইতে তার একটি ১০ তলা ফাউন্ডেশন ভবনের কাজ শেষের দিকে। তার গ্রামের বাড়ী শেরপুরে রয়েছে নামে বেনামে অঢেল সম্পদ। পরিবারের ব্যবহারের জন্য রয়েছে লেটেস্ট মডেলের প্রিমিও গাড়ী। তার সার্কেলের সকল কাজের উপর  নিন্মে ৫ শতাংশ হারে টাকা কমিশন নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। একটি সার্কেলে পুরো অর্থবছরের যত কাজ হয় তার ৫ শতাংশ যদি তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী পায় তাহলে তার বছরে আয় কত?

যে ভাবে কমিশন নেন প্রকৌশলীগন:  প্রথমে একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার আগেই জমা দেওযার সময় উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তরের নির্দিষ্টহারে কমিশন নগদ টাকা জমা দিয়ে কাজ নিতে হয়। শুরু হয় টাকা নেওয়ার পালা। এবার নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তরের নির্দিষ্ট হারে কমিশনের টাকা বন্টন করতে হয়। সূত্র ও তথ্য মতে উপ-সহকারী প্রকৌশলী,উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ৫ শতাংশ মোট ১০ শতাংশ এবং নির্বাহী প্রকৌশলীর জন্য ১০ শতাংশ ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তরে ৫শতাংশ অর্থ দিতে হয় ঠিকাদারদের। এছাড়া অন্যন্য খাতে ২-৩ শতাংশ হারে কমিশনের টাকা নগদে প্রদান করতে হয়। ঠিকাদারের কাজ নেয়া থেকে শুরু করে বিল পাওয়া পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিতে হয়। মোট বিলের উপর ভ্যাট ও এআইটি বাবদ ১৫ শতাংশ। ক্ষেত্র বিশেষ আরও ১-২ শতাংশ বেশি কমিশন দিতে হয়।

এসব বিষয়ে তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কায়কোবাদের বক্তব্য জানতে  তার দপ্তরে গেলে তিনি সংবাদমাধ্যম এর সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের সাথে  কথা বলতে রাজি হননি।

 

  • শেয়ার করুন