নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ

         দফায় দফায় সংঘর্ষে মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনের রায় ঘোষণার পর থেকে উত্তপ্ত ধানমন্ডি ৩২। সেখানে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য একদল বিক্ষোভকারী সকাল ১০টার দিকে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দেয়। সেই থেকে শুরু হয় দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। যা রাত ১১টা পর্যন্ত চলছিল।

এছাড়াও রায় ঘোষণার পর উত্তরায় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসানের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

রণক্ষেত্র ধানমন্ডি 

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে তারা দুটি বুলডোজার নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। বুলডোজারগুলো ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির অবশিষ্ট অংশ ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধায় বুলডোজার নিয়ে ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে যেতে পারেননি। এ নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। আহত হন বেশ কিছু আন্দোলনকারী। সন্ধ্যার পর পুলিশের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরাও আহত হয়েছেন। রাত অবধি চলা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে উত্তেজনা ছিল। এদিন বিকাল ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এমপি পলাতক হাবিব হাসানের বাড়ি ভেবে তারই আপন বড় ভাই নাদিম মাহমুদের বিলাসবহুল বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করে একদল বিক্ষোভকারী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আসরের নামাজের পর একদল লোক এসে বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বাড়ির সামনে পার্কিং করা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে তারা চলে যায়। এ ঘটনায় কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হলে বাড়ির সামনে উৎসুক জনতার ভিড় জমে। এ সময় পাশের একটি মাদ্রাসার ছাত্ররা এসে গাড়ির আগুন নেভায়। বিকালে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।

ঘটনাস্থলে আসা নাদিম মাহমুদের স্ত্রী সীমা রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আমার স্বামী তাবলীগ করতো। উনার বড় ভাই (হাবিব হাসান) রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল করতো। এটা আমার স্বামীর শখের বাড়ি ছিল। তবে কে বা কারা বাড়িটিতে হামলা ও গাড়িতে আগুন দিয়েছে জানতে চাইলে কারো নাম বলেননি তিনি।

জানা যায়, নির্মাণাধীন বাড়িটিতে পরিবারের কেউ বসবাস করতেন না। ৫ আগস্ট পরবর্তী নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল বাড়িটি। পাশেই পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব হাসানের বাড়ি ছিল। তবে হামলাকারীরা হাবিব হাসানের বাড়ি ভেবে তার বড় ভাই নাদিম মাহমুদের বাড়িতে হামলা চালায়। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলায় তিনিও কারাগারে রয়েছেন।

এদিকে রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর এলাকা ও মৌচাক, ধানমন্ডি ২৭ ও উত্তরা এলাকায় পৃথকভাবে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় এক রিকশাচালক আহত হয়েছেন।
বিকাল ও সন্ধ্যায় ঘটনাগুলো ঘটে।

পুলিশের তথ্য মতে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে মৌচাক ক্রসিংয়ে ফ্লাইওভারের ওপর থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ককটেল ছোড়ে। বিস্ফোরণে এক রিকশাচালক আহত হন। তার পায়ে আঘাত লাগে। বিস্ফোরণের পর দুর্বৃত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

এর আগে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ফুটওভার ব্রিজ থেকে অজ্ঞাত একজন ব্যক্তি দুটি ককটেল নিক্ষেপ করে। তবে সেখানে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বিকালে উত্তরার জসিম উদ্দিন ও সন্ধ্যার দিকে ধানমন্ডি ২৭ দুটি করে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত হয়নি।

প্রসঙ্গত, দিনটিকে ঘিরে আওয়ামী লীগ লকডাউন কর্মসূচি দেয়। এ কারণে এক প্রকার আতঙ্ক ও ছিল জনমনে। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও ছিল কম।