প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ
আব্দুল সাত্তার। বয়স ষাট। পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন হাতুড়ি, করাত আর কাঠের গন্ধে। বড় কোনো ঠিকাদারি নয়, বিলাসবহুল বাড়ি নয়—তিনি গড়েছেন দরিদ্র মানুষের জন্য দরজা, জানালা, খাট, আলমারি। কিন্তু তাঁর হৃদয়ে ছিল এক অমূল্য স্বপ্ন—একটি মসজিদ বানাবেন, নিজের হাতে।
চার বছর আগে বিশ্ব ইজতেমায় গিয়ে এক হুজুরের বয়ান শুনে তাঁর অন্তর কেঁপে ওঠে। হুজুর বলেছিলেন, “যার যতটুকু সামর্থ্য, তা দিয়েই আল্লাহর ঘর বানাও। আল্লাহ নিয়ত দেখেন, সম্পদ নয়।” সেই কথাগুলো যেন কাঠের মতোই গেঁথে যায় তাঁর হৃদয়ে। ফিরে এসে তিনি সিদ্ধান্ত নেন—একটি মসজিদ বানাবেন, বিল্ডিং নয়, বাঁশ দিয়ে, কাঠ দিয়ে, নিজের হাতের গাঁথুনিতে।
কাঠমিস্ত্রির হাতেই গড়ে ওঠলো বাঁশের মসজিদ
কোনো স্থপতি ছিল না, কোনো নকশা ছিল না। ছিল শুধু তাঁর কাঠমিস্ত্রির অভিজ্ঞতা, ঈমানের শক্তি, আর বাঁশের প্রতি আস্থা। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, তিনি একা একা বাঁশ কেটে, শুকিয়ে, কাঠের ফ্রেম বানিয়ে, দড়ি দিয়ে গাঁথিয়ে গড়ে তুলতে থাকেন এক ছোট্ট মসজিদের কাঠামো। কখনো বৃষ্টিতে ভিজে, কখনো রোদে পুড়ে, কখনো পকেটের শেষ টাকাটা দিয়ে বাঁশ কিনে। কেউ কেউ হাসতেন, কেউ বলতেন, “বৃদ্ধ পাগল হয়ে গেছে।” কিন্তু তিনি থামেননি।চার বছরের সাধনার ফল সুন্দর আকৃতির মসজিদ।
একদিন সেই বাঁশের কাঠামো দাঁড়িয়ে গেল। ছাউনিও হলো, মাটিতে চাটাই, দেয়ালে খাঁজ কেটে রাখা কাঠে কুরআনের আয়াত। কোনো বিলাসিতা নেই, কিন্তু আছে এক অপার পবিত্রতা। গ্রামের মানুষ এসে দেখে, কাঠমিস্ত্রি আব্দুল সাত্তারের মসজিদ দাঁড়িয়ে গেছে—একটি স্বপ্নের বাস্তব রূপ।
যেখানে মানুষ বলে “আমার সামর্থ্য নেই”, সেখানে আব্দুল সাত্তার প্রমাণ করলেন, ইচ্ছা থাকলে পথ হয়। তাঁর মসজিদে আজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হয়, শিশু-কিশোরেরা কুরআন শেখে, বৃদ্ধেরা দোয়া করেন। আর তিনি বসে থাকেন এক কোণে, চোখে পানি, মুখে হাসি।
এই গল্প আমাদের শেখায়—আল্লাহর পথে এক কদম এগোলে, তিনি দশ কদম এগিয়ে আসেন।
আব্দুল সাত্তারের বাঁশের মসজিদ যেন আমাদের ঈমানের আয়না হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আমাদেরও জাগিয়ে তোলে প্রশ্ন—আমরা কি আমাদের সাধ্য অনুযায়ী কিছু করছি?