৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার,রাত ৮:২৬

সাইবার নিরাপত্তায় দেশের অর্ধেকের বেশি ব্যাংকের এআই নীতিমালা নেই

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

আজ বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অথিতিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ

আজ বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অথিতিরা।

দেশের ৬০ শতাংশ ব্যাংকেরই সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের নীতিমালা নেই। ৪০ শতাংশ ব্যাংকের এই নীতিমালা রয়েছে। এ ছাড়া এআই ব্যবহার করে ব্যাংক পরিচালনার নীতিমালা নেই ৬৮ শতাংশ ব্যাংকের।

আজ বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এ তথ্য জানানো হয়। আলোচনায় ব্যাংক খাতে এআই ব্যবহারের ওপর একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। বিআইবিএমের তিন শিক্ষক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির দুই কর্মকর্তা মিলে মোট ৩৮টি ব্যাংকে প্রশ্ন-উত্তরের তথ্য নিয়ে গবেষণাপত্রটি তৈরি করেন। গবেষণার প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের শিক্ষক ও পরিচালক মো. শিহাব উদ্দিন খান। অনুষ্ঠানে অনলাইন মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী, ইস্টার্ন ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি ওসমান এরশাদ ফয়েজ, বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার অ্যান্ড ডিজাস্টার রিকভারি সাইট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ ইসহাক মিয়া, বিআইবিএমের মহাপরিচালক এস এম আবদুল হাকিম প্রমুখ।

আলোচনা সভায় এআই–নির্ভর সাইবার নিরাপত্তা টুল ব্যবহারে ব্যাংকগুলোর তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) অবকাঠামোর প্রস্তুতি তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, দেশের ৬৯ শতাংশ ব্যাংক আংশিকভাবে প্রস্তুত। অন্যদিকে ১১ শতাংশ ব্যাংক নিজেদের প্রায় প্রস্তুত বলে দাবি করেছে। আরও ১১ শতাংশ ব্যাংক এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বিপরীতে ৯ শতাংশ ব্যাংক এখনো প্রস্তুত নয় বলে জানায়।

গবেষণায় আরও বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের সাইবার নিরাপত্তায় দুর্যোগ পুনরুদ্ধার বা ডিজাস্টার রিকভারি পরিকল্পনায় এআইয়ের ব্যবহার করে মাত্র ৫ শতাংশ ব্যাংক। আর গবেষণায় অংশ নেওয়া বাকি ৯৫ শতাংশ ব্যাংক জানিয়েছে, তারা এ ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করে না।

মূল প্রবন্ধে বিআইবিএমের পরিচালক মো. শিহাব উদ্দিন খান বলেন, পুরো বিশ্বেই আর্থিক খাতসহ সব ধরনের খাতে আধুনিকায়ন হয়েছে। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার হামলা। সেখানে আর্থিক খাত নিয়মিতভাবেই অন্যতম টার্গেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এই খাতে নিরাপত্তা বাড়াতে হলে এআই ব্যবহার প্রয়োজন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বলেন, অনলাইন ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ–নির্ভর ব্যাংকিং কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী ব্যাংক খাতের কেন্দ্রবিন্দু। এআই ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো সহজে অস্বাভাবিক কার্যক্রম শনাক্ত, ম্যালওয়্যার ও জালিয়াতি প্রতিরোধ কার্যকরভাবে করতে পারবে। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সাইবার নিরাপত্তা শুধু প্রযুক্তি নয়, এটি একটি কৌশলগত বিষয়। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকও সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে নিয়মিত ই-ব্যাংকিং, ই-কমার্স, মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন পেমেন্ট নীতিমালা হালনাগাদ করছে।

পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সারা পৃথিবী এআইকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী আমরা দেখতে পাচ্ছি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষত পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা এবং ব্যাংকিং খাতে দ্রুত প্রয়োগের দিকে যাচ্ছে। ১০-১৫ বছর পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিকস মানবজীবনের সঙ্গে সহাবস্থান করবে। তাই এখন থেকেই আমাদের এই বিষয়ে কৌশলগত পরিকল্পনা প্রয়োজন।’

ইস্টার্ন ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি ওসমান এরশাদ ফয়েজ বলেন, ব্যাংকগুলোকে নিজেদের আরও বেশি আধুনিকায়ন করতে হবে। না হলে ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা দখল করে নেবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ও ফিনটেক কোম্পানি আর্থিক বাজার বদলে দিয়েছে। নতুন প্রজন্ম এখন ব্যাংকে যেতে চায় না, তারা সবকিছু অ্যাপসে চায়। এ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তায় ব্যাংকের এমডি ও সিইওদেরও প্রযুক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ থাকা প্রয়োজন। এ জন্য ব্যাংকগুলোর প্রয়োজন গ্যামিফিকেশন বা খেলার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সচেতনতা তৈরি করা।

বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার অ্যান্ড ডিজাস্টার রিকভারি সাইটের সিইও মুহাম্মদ ইসহাক মিয়া বলেন, দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকে প্রযুক্তি খাতে বড় বিনিয়োগ থাকলেও তা কতটা কাজে লাগানো হচ্ছে, এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই গবেষণায় যেসব ব্যাংক অংশগ্রহণ করেছে, তাদের বেশির ভাগ ভালো ব্যাংক। তাহলে বাকি ২২ ব্যাংকের অবস্থা নিশ্চয়ই আরও খারাপ। এ ছাড়া দেশে এখনো আইটি ফর বিজনেস ধারণাটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।

  • শেয়ার করুন